রাজধানীর গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজারে প্রতি মাসে গড়ে ৯ লাখ টাকা দান করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। টাকা ফান্ডে জমা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই আবার টাকার স্তূপ জমা হচ্ছে এ মাজারে। এ ছাড়া মুরগি, চাল, ডালসহ বিভিন্ন পণ্যও দান করে থাকেন অনেকেই। মনের আশা পূরণ হওয়াসহ নানা বিষয়ে মানত করে এখনে দান করে থাকেন ভক্তরা। মাজারের একজন খাদেম দাবি করেন, শুধু মুসলমানরাই নন, এখানে হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের লোকজনও মানত নিয়ে আসেন।
সম্প্রতি মাজারটি ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম গুলিস্তানের সড়ক বিভাজকের মাঝখানে অবস্থিত মাজারটির পরিবেশ বেশ গোছানো। মাজারের চারপাশে দর্শনার্থীদের বসার জায়গাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কাচে ঘেরা মাজারটির চারপাশেই রয়েছে শাটার। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সব শাটারই খোলা থাকে। রাত ১০টার পর ৩ পাশের সাটার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মূল কবরের বাইরে গ্রিল ও কাচের দুটি বেড়া রয়েছে। এর মধ্যে আবার গোলাকৃতির ফাঁকা জায়গা রয়েছে, যেখান দিয়ে ভক্তরা মাজারে টাকা দেন। সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর মাজারের টাকা গণনা করা হয়। এরমধ্যে আবারও কবর দুটির চারপাশে টাকার স্তূপ জমা হয়েছে। ১০ টাকার নোট থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার নোট দেখা গেছে। ২০, ৫০, ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটও রয়েছে। অনেকেই কয়েনও দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ মাস পর গত ২২ নভেম্বর মাজারের দানবাক্স খোলা হয়। সেখানে একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন ৩৫ লাখ ২২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর আগের ৩ মাসে ২২ লাখের বেশি টাকা উঠেছিল।
কমিটির সদস্যদের উপস্থিতে টাকা গণনা করে রেজুলেশন তৈরি করা হয়। এরপর মাজারের ফান্ডে এসব টাকা জমা হয়। মাজারের ফান্ড পরিচালনার জন্য তিনটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ ছাড়া মাজারের টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়নকাজ ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। তবে সব কাজই কমিটির অনুমোদনক্রমে হয় বলে দাবি তাদের।
মাজারের টাকা নয়-ছয় নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি তা শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে এসেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মাজার পরিচালনার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কমিটি করে দিয়েছে। সেই থেকে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও সংস্থাটির সম্পত্তি কর্মকর্তাকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটিতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আঞ্চলিক কার্যালযের নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সার্বিক কার্যক্রম ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে পারিচালনা করা হয় বলে জানা গেছে। মাজারটি পরিচালনায় কমিটির সদস্য ছাড়াও সরাসরি ২২ জন যুক্ত আছেন, যাদের মধ্যে ৭ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ৪ জন খাদেম রয়েছেন।
মাজারের অ্যাকাউন্টগুলোতে এখন কত টাকা জমা আছে তা জানতে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। টাকার পরিমাণ জানাতে এক দিন সময় চান তিনি। এরপর চার দিন তার দফতরে ঘুরেও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। পরে মাজার মসজিদের ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইমাম মুফতি মাসুম আল ফরহাদ জানান, তার কাছে মোট টাকার হিসাব নেই। তিনটি অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, তার হিসাব সিটি করপোরেশনই বলতে পারবে।
এর আগে কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, মাজারের টাকা অপচয় বা ডানে-বামে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকা গণনা করে ফান্ডে জমা দেওয়া হয়। কমিটির অন্য একজন সদস্য দাবি করেন, যাতে মাজারের দানের টাকা নিয়ে কোনো অনিয়ম না হয় সে জন্য অনেক সময় টাকা গণনার আগে ও পরে সবাইকে চেক করা হয়।
এদিকে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে অবস্থিত এ মাজারটি ঐতিহাসিকভাবে গরুত্বপূর্ণ। এ মাজার নিয়ে নানা ধরনের কথা প্রচলিত থাকলেও এর সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি মাজারের ভক্তরাও। তাদের ভাষ্য মতে, মাজারটির ভেতরে থাকা দুটি কবরের একটি গোলাপ শাহ, অন্যটিতে তার খাদেম শায়িত আছেন।
ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলাপ শাহ অনেক বুজর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তার উসিলায় অনেকের মনের বাসনা পূরণ হয়। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাজার মসজিদের খতিব মুফতি মাসুম আল ফরহাদ সময়ের আলোকে বলেন, এ মাজারকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ভণ্ডামি চলত। সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় তা কমাতে পেরেছি। এখানে কোনো অনৈতিক কাজ হয় না। মাজারে সেজদাহ দেওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
Related
Leave a Reply